Header Ads

তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান - ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি

আজকে সকাল থেকেই ফেসবুক এবং টুইটারে বিচ্ছিন্ন ভাবে খবর টা দেখছিলাম যে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে। অবশ্য এটাই প্রথম বার নয়, এর আগেও অন্তত ৪ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এই দেশে এবং প্রত্যেক বারই সেটা ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায় যে, আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২৩ সালে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এর হাত ধরে। তিনি কখনোই চাননি তুরস্ক পুরোপুরি ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে উঠুক। তিনি কিছু ভাষাগত সংস্কার করেছিলেন এবং বেশ কিছু কট্টর ইসলামী জামাকাপড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সেই থেকে সে দেশের সেনাবাহিনী বরাবর ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব থেকেছে।



প্রথম সেনা অভ্যুত্থানটি হয় ১৯৬০ সালে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্ডার্স এর হাত ধরে তুরস্কে আবার ধর্মের শাসন একটু একটু করে ফিরছিলো। হাজারখানেক মস্জিদ আবার খোলা হয় তার সময়ে, আরবি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বেশ কিছু স্কুলও খোলা হয় ধর্মের শিক্ষা দেবার জন্য। এর বিরুদ্ধে গিয়ে বেশ কিছু সেনা অফিসার প্রথম সেনা অভ্যুত্থানটি ঘটায়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বেশ কিছু ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয় দেশদ্রোহিতা এবং সংবিধান বিরোধিতার অভিযোগে। সামরিক আদালতে তাদের বিচার হয় এবং পরের বছরই প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সেনা।

এর পরে ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে আরো তিনবার সেনা অভ্যুত্থান হয় সেদেশে আর তার কারণও একই ছিল। তুরস্কের সেনা বরাবর ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারি শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছে। ১৯৭১ সালে সেই একই ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে গিয়ে সেনা, সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে। তবে ৭১'এর সেনা অভ্যুত্থান হয় রক্তপাতহীন। এখানে কোনো সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। তুরস্ক সেনা সরাসরি সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেমিরেল পদত্যাগ করেন। তখন সেনার সাহায্যেই রিপাব্লিকান পিপলস পার্টি ক্ষমতায় এসে নতুন সরকার গঠন করে।

আজকে সকালে শুনলাম গতকাল দুপুর থেকে সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়। সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ী ঘুরে বেড়াচ্ছে সেদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর আঙ্কারা এবং ইস্তানবুলে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এখনো পর্যন্ত। যদিও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী দাবী করেছেন যে সামরিক অভ্যুত্থান আটকানো গিয়েছে এবং মোট ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেদেশে ইন্টারনেট এবং টেলিফোনে পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেদেশের পুলিশ রাষ্ট্রপতিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ঋণস্বীকার: USATODAY
Photo courtesy: Sedat Suna, EPA

No comments:

Powered by Blogger.