Header Ads

একটি নির্বাচিত মৃত্যু - মাহাবুবা ইসলাম আজমি(মুক্তি)

মৃত্যুর দু’বছর আগে আমার নানা আমার হাতে একটা ছোট সুটকেস তুলে দিয়েছিলেন। কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলেন, কৌতুক ঠাট্টার সুরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, যে তার ইচ্ছা, তিনি চলে যাবার পর আমি যেন সুটকেসটা খুলে দেখি। আজ থেকে পনের বছর আগে নানা, নানী, আমি আর আমার ছোট ভাই আমেরিকা এর শহরে ইমিগ্রেন্ট হয়েছিলাম। আমেরিকাকে বলা হয় ল্যান্ড অফ অপরচুনেটি। বেশিরভাগ মানুষ ইমিগ্রেন্ট হয় উন্নত বিশ্বে নতুন করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষে নয়তো ভাগ্য বিরম্বনার শিকার হয়ে। আমরা প্রথম উদ্দেশ্যে আমেরিকায় এসেছিলাম। বলা বাহুল্য উদ্দেশ্য অনেকখানি সফল হয়েছে, তার আগে আমার নিজের সম্পর্কে একটু বলে নেয়া যাক| আমার জন্ম হয় একটা ব্রোকেন ফ্যামিলিতে, প্রথম মেয়ে হয়েছে শুনে তথাকথিত পিতা পিঠটান দেন। জন্মের তিনদিনের মধ্যে নিরুদ্দেশ হয়ে যান, এই ধরণের ঘটনা সাধারণত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে দেখা যায়, কিন্তু এলিট পরিবারেও যে এমন ঘটনা ঘটে তা হয়ত কেউ নাও বিশ্বাস করতে পারে। যাই হোক ঘটনা সত্য একটুও বাড়িয়ে বলছিনা। এরপর মা আবার বিয়ে করে সে ঘরে আমার ছোট ভায়ের জন্ম। মার সাথে যে ভদ্রলোকের বিয়ে হয় তার সাথেও সম্পর্ক বেশিদিন টিকলনা। পরে মা আবার তৃতীয় বিয়ে করে বর্তমানে ঢাকায় স্থায়ীভাবে সুখে সংসার করছে। ভাগ্য ভাল থাকায় আমার নানা ছিল প্রচন্ড বড়লোক, তিনি ঠিক করলেন বাংলাদেশে আর থাকবেনা। শেষ পর্যন্ত আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে নিয়ে আমিরিকায় সেটেল হলেন। প্রথমে আমেরিকায় যখন এলাম তখন বেশিরভাগ স্মৃতিই আমার মনে নাই। ছোট ছিলাম বলে নানা,নানি আগলে রাখত। পরে যখন বুঝতে শিখলাম মনে হল, শিকড়ের টান বলে একটা কথা আছে, আর আমার শিকড় আমেরিকায় নয় বাংলাদেশে।

নানা আমাকে আদর করে টুনটুনি বলে ডাকতো। আমার আসল নাম সিনথিয়া হোসেন। লেখিকা হবার ইচ্ছা আমার সেই লক্ষে লেখকদের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে নিয়মিত ক্লাস করেছি। আমি জানি আমি লিখতে পারি অন্তত এটুকু বিশ্বাস আমার আছে।আজকাল বাণিজ্যকরনের যুগে সবকিছুই বিজনেস হয়ে গেছে। ওয়ার্কশপে যেতে আমি চাইনি, কিন্তু নানার পিড়াপীড়িতে যেতে বাধ্য হই। নানা আন্তরিক ভাবেই চাইতেন, আমি যেন লেখিকা হই। যেন তেন লেখিকা নয়, রীতিমত রহস্য উপন্যাসের লেখিকা।ওয়ার্কশপে বিখ্যাত লেখকরা লেখালেখি, সাহিত্য এই রকমের সহজ কিছু কথাবার্তা বলে একটা গল্প অর্ধেকটা বানিয়ে বললো বাকি অর্ধেকটা শ্রোতার দলকে লিখে শেষ করতে বলল। যেন বাড়ি মারলেই বাকি অর্ধেক গল্প বেরিয়ে আসবে কিছু শ্রোতা আবার একেবারেই নিরেট। কি আর করা এরই নাম আমেরিকা। আমেরিকা যা করে বাকি দুনিয়াও সেটা দেখে নকল করে। এখন কি আর হোমার এর গ্রীক পৌরানীক গল্পকাহিনির যুগ, সে যুগ পৌরানীক কাহিনির মতই বিলীন হয়ে গেছে। এখন কাফকা, কিটসের উপন্যাসও ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে।

নানা মারা যাবার পর পরোপুরি বুঝতে পারলাম লেখার ক্ষমতা আমার ষোল আনাই আছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকখানি বই লিখেও ফেললাম। পাঠক নতুন লেখক বলে মুখ ফেরালনা বরঞ্চ তারা আমার বইগুলো আগ্রহ করে পড়তে লাগলো। আমিরিকার কিছু কিছু ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগে, তার মধ্যে এদের বই প্রীতি আমাকে খুব আনন্দ দেয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিখ্যাত লেখকদের বই গুলো পাঠকেরা আগ্রহ নিয়ে কেনে কিন্তু নবিন লেখকদের বই ভাল হলেও তারা ছুঁয়েও দেখেনা, এই হল মুশকিল। বিখ্যাত, খ্যাতিমান মানুষদের বই কিনতে হবে, আরে ভাই আজ যে বিখ্যাত কাল সে অখ্যাতই ছিল। আমেরিকায় এসব ব্যাপার নেই। এখানকার মানুষ বিখ্যাত, অখ্যাত সবই যাচাই করে। আমি সাধারণত থ্রিলার, হরর গল্প, ভ্রমন কাহিনি এ জাতীয় লেখাই বেশি লিখে আসছি। স্বাভাবিক জীবন যাত্রার বাইরে আর ও যে একটা জগত আছে যে জগত বস্তুবাদি জগতের ধরাছোঁয়ার বাইরে সেটা আমি বিলক্ষণ বুঝি। আমরা জন্ম নেই, একসময়ে আর এই সুন্দর ধরণীতে থাকবনা সবাই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, কেমন সেই জগত, প্রথম বার আমরা যখন মৃত্যু বরণ করব তখন কবরের জীবন, শুরু হবে, হাসর হবে, কিয়ামাত হবে, এসবই ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে, বস্তুবাদি পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও আমি খুব ভালভাবেই অনুভব করি আমার হাতের কাছেই সেই অতিপ্রাকৃত জগত। 

লেখালেখি ব্যাক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য, নানার সুটকেসের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। সুটকেস তো দুরের কথা নানার স্মৃতিই প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম এরই নাম পৃথিবী, কে কার কথা মনে রাখে নিজের বাপ, মা পর্যন্ত লাথি মারে, কথাটা স্বার্থপরের মত শুনাচ্ছে, কিন্তু সত্য বলছি নানাকে আমি সত্যই শ্রদ্ধা করি,ভালবাসি, তাকে মন থেকে মুছে ফেলা এজনমে আমার পক্ষে সম্ভম নয়। যত যাই হোক, তাই নানার কথা মনে পরতেই তার বিখ্যাত সুটকেসের কথা মনে পরল, আমি আমার পড়ার ঘরে ঢুকলাম, চারপাশে বুকশেল্ফে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা বই আর বই, মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে নানির রুমে চট করে ঢুকে আয়নায় নিজের অগোছাল চুলে একটা বিনুনি বেধে নেই, চেহারাটা ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে, কিচেনে ঢুঁ মেরে কফি মেকারে গরম,গরম কফি তৈরি করেই দে ছুট, এক ছুটে আমার পড়ার ঘরে ঢুকে রকিং চেয়ারে দোল খেতে, খেতে কফিতে মুখ ডুবাই। আজ যখন পড়ার ঘরে ঢুকে নানার কথা মনে পরল, তখন নিজের অজান্তেই ঘরের এক কোনায় হাল্কা ছাই কালারের সুটকেসের দিকে নজর পড়লো| সুটকেসটা আমি আমার রুমে রাখিনি, নানির ঘরে রেখেছিলাম, নানি বিরক্ত হয়ে তা আমার পড়ার রুমের এক কোনায় রেখে দেয়। কেননা নানা যাই করতো নানি তাতে বিরক্ত হত, অথবা বিচিত্র ধরনের অবজ্ঞা করত। 

সুটকেসের দিকে নজর পরতেই মনে হল, আশ্চর্য দু বছর হয় গেছে নানা নেই অথচ আমি একবারও বিশ্মিত হইনি সুটকেসে কি আছে তা দেখার, নানা মারা যাবার পর একবারও তা স্পর্শ করিনি। ওই ছোট ছাই রঙা চকমকা হাতল আমার চেনা ছিল। নানা যখন দুরে কোথাও যেত তখন ওই সুটকেস অবশ্যই সাথে নিত। আমার মনে পরে আমি যখন ছোট তখন নানা শিকাগো থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রয়োজনীয় কাজে যেতেন, তার আগে বলে রাখা ভাল সেখানকার সব কমিউনিটিতে তার যথেষ্ট সুনাম, খুব কম বাঙালির তা আছে। আমি মনে করি তা অর্থকড়ির জন্য নয়, বরং তার স্বভাবগত ভদ্রতার জন্য। যার মধ্যে ছিল এক প্রকার আভিজাত্য। বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের মধ্যে যা দেখা যায়, তা নানাকে ভোগ করতে হয়নি, দেশে যেমন তিনি সম্মানিত ছিলেন, এই আমিরিকাতেও তিনি ভালই কদর পেয়েছিলেন।বাংলাদেশি টপক্লাস গায়িকা, নায়িকারাদেরও এদেশে এসে মেথরনির কাজ করতে হয়। বড় জাঁদরেল জেনারেল এদেশে এসে হয়ে যায় পিৎজাহাটের ডেলেভারি ওয়েটার। সেক্ষেত্রে নানাকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। যাই হক নানা ট্রিপ শেষে শিকাগো ফিরতেন, তখন ওই সুটকেস চোখে পড়ত। হাতড়াবার চেষ্টাও করতাম, কিন্তু নানা ছিল সজাগ, সুটকেস আমার হাতের আড়ালে সরিয়ে নিত। তখন সুটকেস আর নানার শরীর থেকে সুরভিত একটা সুগন্ধ পেতাম। আর ভ্রমনের অদ্ভুত গন্ধও আসতো ওটা থেকে। অথচ ওই সুটকেস আমি এখনও স্পর্শ করিনি। কি এমন রহস্মবস্তু এর মধ্যে আছে যা নানা আমাকে তার মৃত্যুর আগে দিয়ে গেল। যা আমাকে আজ এতটাই কৌতূহলী করে তুলেছে। ধির পায়ে সুটকেসের দিকে এগিয়ে গেলাম, আলতো করে সুটকেস খোলার চেষ্টা করলাম। যদিও আমি খুব বেশি আশাবাদী নই এর মধ্যে থেকে মহামূল্যবান কিছু বেরুবে। তারপরও বুক কাঁপতে লাগলো। চাপ পরতেই ফুট করে একটা শব্দ করে সুটকেসটা খুলে গেল। মনকে শান্ত করে আমি সুটকেসের ডালাটা মেলে ধরলাম। এর ভেতর থেকে এমন চমৎকার সুগন্ধ ছড়িয়ে পরল যেন আমাকে পাগল করে দেবে। অথচ এটা অনেক পুরণো আমলে তৈরী, সাধারাণত পুরণো আমলের ব্যাগ, ল্যাগেজ, আসবাব থেকে ভ্যাপসা পচা গন্ধ ছড়ায়। চমৎকার গন্ধ নাকে সয়ে যেতেই এর ভেতর কি আছে তা দেখতে পেলাম। না ভেতর তো একেবারেই গড়ের মাঠ। তেমনতো কিছুই দেখছিনা। কয়েকটা নোট বই, কিছু চিঠিপত্র, এক কোণায় একটা বাঁটুয়া। অনেকটা মেয়েদের পার্স এর মত। এই রকম সৌখিন বাঁটুয়ার আমার খুব শখ। বাঁটুয়াটা চাপ দিতেই তা খুলে গেল। ভেতরে একটা ছোট শিশি তাতে সবুজ রঙের তরল সুগন্ধি আছে বলে মনে হল। শিশির মুখ খুলে সবুজ রঙের তরল হাতে নিতেই আমার সর্বাঙ্গ সুগন্ধে মৌ মৌ করতে লাগল। এমন সুগন্ধি ছড়াচ্ছে যেন আমি পৃথিবীতে নেই আমি স্বর্গের কোন খানে চলে গেছি। বুঝতে পারলাম শিশির মধ্যে সবুজ তরলটা আসলে একধরণের পারফিউম। সবুজ তরলটা ঝাঁকিয়ে তার থেকে এক ফোঁটা হাতের পালসের কোনে লাগিয়ে নিলাম।তারপর চুপচাপ বাঁটুয়ার ভিতর শিশিটা যথা স্থানে রেখে সুটকেসে ভরলাম। সুটকেস বন্ধ করে বার কয়েক পায়চারি করে পড়ার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। রাত্রিরে ভাল ঘুম হলনা, তবে শেষ রাতের দিকে হাল্কা ঘুম এল। সকালের দিকে শাওয়ার নিতেই শরীরটা ফ্রেশ হল। 

আজ শনিবার তাই সবাই ছুটির আমেজে আছে। নানি আরও কয়েকজনের সাথে বসে গল্প করছিল। এক মগ কফি আর একটা টোস্ট মুখে নিয়ে চিবোতে লাগলাম, সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করতে আমার একদম ভাল লাগেনা। মাক্সিমাম সময়ে আমি ব্রাঞ্চ করি। আমার যে অনেক বন্ধু আছে তাওনা। কয়েকজনের নাম ও মুখ চিনি তবে ঘনিশ্টতা তাদের সাথে আমার একটুও নেই। আর ভাল মনের কিছু ছেলে মেয়ে চিনি যারা আমাকে পাত্তাও দেয়না আবার অপছন্দও করেনা। এর মধ্যে একজন কোরিয়ার মেয়ে লি আর তার বয়ফ্রেন্ড হোশে। একবার শখ করে ভারতীয় লেহাঙ্গা পরে ওদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, এক ভারতীয় বান্ধবি মাথায় চটি খোঁপা, হাত ভরতি রেশ্মি চুড়ি ও নানা অলংকার দিয়ে সাজিয়ে দিল। যখন লি আর হোশে সাথে দেখা করব তখন হল এক কেলেংকারি, কোথা থেকে লির কুকুরটা আমাকে দেখে ক্ষেপে গেল।ওটা তেড়ে এসে আমার লেহেঙ্গার ওড়নাটা ধরে টানতে লাগলো।আমি লাগালাম দৌড়, দৌড়ের ঠেলায় দরজা খুলতে ভুলে গিয়ে হাঁটুর কাছে বাড়ি খেলাম।আর এক আফ্রিকানের ঘাড়ে গিয়ে পরলাম।হাত ভরতি চুড়ি ভেঙ্গে চুরে একশেষ, কয়েকটা কনুই ভেদ করে উপরে উঠে গেল। ততখনে লি এসে আমাকে উদ্ধার করল। লির তো হাসতে, হাসতে অবস্থা কাহিল। চাইনিজ, কোরিয়ানরা খুব প্রফেসনাল হয় এরা আবেগ ধরে রাখে, কিন্তু সেদিন লির হাসি দেখে বুঝলাম এরাও খুব আবেগি। তাছাড়া আমার চেহারায় এমন কিছু ছিল যা তাদের হাসতে বাধ্য করেছিল। আয়নার সামনে যখন দাড়ালাম নিজেকে মনে হল পাঁকা চোট্যা, কুটনি, চোখগুলি কুতকুতে লাগছিল।

মুখ-টুখ পরিস্কার করে শান্ত হয়ে বসলাম, সবাই কে সব জিনিস মানায় না। কফি খেতে খেতে পড়ার রুমে আবার ঢুঁ মারলাম। সারাদিন কিভাবে কাটাব তার একটা ছক মনে মনে কেটে রাখলাম। শিকাগোর টেনথ এভিনিউ এর যে বাড়িতে আমরা থাকছি তা আমার নানা প্রথম যখন এদেশে আসেন তখন লোণ করে কেনেন, যাতে ভবিষ্যতে পানিতে পড়তে না হয়,এসব ব্যাপারে তিনি ছিলেন পাঁকা লোক। বসে, বসে খেলে রাজার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায়, আমরা যেন ভদ্রমানুষের মত জীবন চালাতে পারি তার ব্যবস্থাও তিনি করে গেছেন। আমি আমার রুমে এসে গোলাপি ওভারকোট গায়ে চাপালাম, কালকের ঘটনা মনে করতে সুটকেসের কাছে এগিয়ে গেলাম, সুটকেস আলতো করে ধরতেই তা খুলে এলো, ভেতরে হাত দিয়ে বাঁটুয়া খুলে সবুজ রঙা তরল সুগন্ধি হাতের কোনে ও গলার বিউটি বোনে ছোঁয়ালাম। এরপর বাইরে পা বাড়ালাম। বাইরে পা দিতেই মহিলারা আমার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকাল। এমন সচারাচর হয়না। আমি ব্যস্ততার ভান করে সবাই কে হ্যালো বলে সেখান থেকে সটকে পড়লাম। এখান থেকে নাইনথ এভিনিউ এর লির বাসায় নেমে, তাকে নিয়ে শিকাগোর লাইব্রেরিতে যাব। পথে ভোজবাজির মত একলোক হাজির,হাতেলেখা প্ল্যাকার্ড বুঝলাম ভিক্ষুক, এখন মন্দা অর্থনৈতিক কারণে, অনেক বেকার ছেলেপুলে হাত পাতছে, দেখে খারাপ লাগে, তাকে পঞ্চাশ সেন্ট দিলাম, বেচারা এতেই খুশি হল বলে মনে হল। বাংলাদেশ হলে দশ টাকা দিলেও খুশি হত কিনা সন্দেহ।আবার চলতে শুরু করলাম, রাতে ভাল ঘুম হয়নি ,চোখে তন্দ্রা মত আসছিল, চোখ আপনি বুজে আসছিল কানের কাছে বাতাসের শব্দ মৌমাছির ভোঁভোঁ শব্দের মত শোনাচ্ছে, এমন সময়ে কেউ একজন জোরে কানের কাছে চিৎকার করল, তোমার কি কাণ্ডজ্ঞান নেই, সিলি গার্ল। আর একটু হলেই মাটির ছয় ফুট নিচে কফিনে শুয়ে থাকতে, চারদিক নজর দিয়ে দেখি আশেপাশে একটা ছোট ভিড়। ভিড়ের কারন কি জানার ও বোঝার চেষ্টা করলাম। যে আমার কানের কাছে চিৎকার করছিল, সে মানুষটার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে হড়বড় করে কিছ একটা বলছে। ছ ফুট লম্বা শ্বেতকায় ভদ্রলোকটি বলল, কোন গ্রহের বাসিন্দা তুমি, খুব বরাত ভাল এতবড় এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে গেলে।প্রশ্ন করলাম, তোমার নাম কি? সাইমন, জবাব এলো। এবার সে এমন ভাবে তাকাল মনে হল আমি বদ্ধ পাগল। পেছনে চাইতে দেখি তিনটা কার উল্টে পড়ে আছে। ভেতরে যে ক’জন ছিল তাদের এম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে। আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে রইলাম। আরও কিছু মানুষ আমার দিকে উকিঝুকি মারছিলো। আমি বিব্রতবোধ করলাম, লির বাসায় না গিয়ে, নিজের বাড়ির পথ ধরলাম। এতবর দুর্ঘটনা ঘটল আর আমি কিছুই টের পেলামনা। 

বাড়িতে পৌঁছে দেখি লি আমার বেডে বসে পা নাচাচ্ছে। মনের ভাব গোপন করে জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। লি আমার হাতে একটা টিকিট ধরিয়ে দিল, মুচকি হেসে বলল কাল সকালে আমরা ওয়াশিংটন যাচ্ছি তৈরী থাকিস সকালে রওনা দেব। আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে সে বেরিয়ে গেল। ক’দিন ধরেই প্ল্যান হচ্ছিল ওয়াশিংটন যাবার। নানা মারা যাবার পর শিকাগো ছেড়ে আর কোথাও যাওয়া হয়নি, না হলিডেতে না উইকএন্ডে। আমাকে আবার নানি কোথাও একা ছাড়তে চায়না। এই এক মুশকিল আমরা একা এসেছি, যাবও একা, একা ছাড়লে সমস্যা কোথায়? এখন বুঝাও তাকে সমস্যা, আমার চোখ বুজে এলো রাত্তিরে ভাল ঘুম হয়নি সে কারণে, গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এক নাগারে কতক্ষণ ঘুমিয়েছি মনে নাই, যখন ঘুম ভাঙল, তখন দেখি ঘড়িতে রাত তিনটা বাজে। আর ঘণ্টা দু-এক এর মধ্যে ভোর হয়ে আসবে। পা টিপে টিপে নানির ঘরে এলাম, নানি গভীর ঘুমে মগ্ন, তাকে আর না জাগিয়ে কিচেনে এলাম, ভীষণ খিদে পেয়েছে সারাদিন দানা, পানি মুখে দেইনি। মুখে দুটো গুজেই আমার রুমে ঢুকবো এমন সময় মনে হল পড়ার রুমে কি যেন ফেলে এসেছি। পড়ার রুমে কোনায় সোজা আমার দৃষ্টি চলে গেল। প্রথমে একটা ধাক্কা খেলাম, হাল্কা ছাই রঙা সুটকেস থেকে স্নিগ্ধ আলোয়ে চারদিক ছেয়ে আছে। যেন কোন ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখাচ্ছে। আমার গলা শুকিয়ে আসছিল, তা সত্তেও আমি ওই স্থান ছেড়ে যেতে পারছিনা। বরঞ্চ সুটকেসের কাছে এগিয়ে গেলাম, এর থেকে যে আলো আসছে তাই নয় এত সুন্দর ফুলের সৌরভ ছরাচ্ছে যা আমাকে মাতাল করে তুলছে। সুটকেসের হাতলে হাত রাখলাম, মনে হল আলোটা আস্তে করে নিভে এলো। আমি কাঁপা হাতে সুটকেসটা আমার রুমে নিয়ে এলাম। সুটকেস খুলে দেখলাম ভেতরে যেমনটি দেখেছি তাই আছে। নোট বই ও গুটি কয়েক চিঠি সরিয়ে তার মধ্যে কিছু জামা, কাপড় গোছ গাছ করে ঢুকালাম। সকালে ওয়াশিংটন যাব, দিন কয়েক থাকব জামা, কাপড় ঢুকানোর পর বাঁটুয়াটা খুলে তার থেকে সবুজ সুগন্ধি হাতে মেখে নিলাম। বাঁটুয়াটা সাথে নিলাম। সকাল হতে বেশি দেরি নাই। আমি নিজেও তৈরি হয়ে নিলাম। ছোট খাট নানা ব্যাস্ততায় রাতের অদ্ভুত ঘটনা দিনের আলোয় ভুলেই গেলাম। লি, হোশে এসে পড়লো। তাদের কে সাথে নিয়ে মুখে দুটো দিয়েই নানির কাছ থেকে বিদায় নিলাম। নানি হাজারটা উপদেশ দিল। নানি কে ফেলে যেতে ইচ্ছা হলোনা, পেছন ফিরে দেখি সে তখনও বাড়ির সামনে দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে। 

একটা ট্যাক্সি নিয়ে এয়ারপোর্টে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম। নিরাপত্তা ব্যাবস্থা চারগুণ করা হয়েছে, সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাবার পর এই ব্যাবস্থা। স্কিনিং মেসিনের সামনে দাড়াতে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল, যে কাজটা করছিল সে আমাকে স্যালুট করে বসল, শুধু তাই নয় অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীদের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে, আমার ইমিগ্রেশন তাড়াতাড়ি করে অত্যন্ত সম্মানের সাথে আমাকে বিমানের ফাস্ট ক্লাসে উঠিয়ে দিল। লি আর হোশে তো অবাক, আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমার টিকিট ইকোনমির, ফাস্ট ক্লাসের না, কিন্ত সে নাছোড়বান্দা, শেষে তাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হল। ঠিক সময়ের মধ্যে আমরা ওয়াশিংটন পৌছালাম, এত আনন্দ লাগল। হোটেল বুক করা আছে। আমি বললাম কিছুক্ষন ঘুরে বেড়ানো যাক, ওয়াশিংটনে তুষারপাতের জন্য মানুষজন ঘরে অবস্থান করছে। তবে পর্যটকরা তখনও এই সুন্দর তুষারপাত দেখছে। আমরা গেলাম জেফারসন মেমোরিয়াম মনুমেন্ট দেখতে, ভিতরের মনুমেন্ট কি দেখব, বিশাল ডোম আর মেঝের শ্বেত শুভ্র হা করে দেখলাম। বিকাল হয়ে আসছিল দেরি না করা হোটেলে ফিরলাম।লি ও হোশে এক রুমেই আছে, আমি তো তাদের প্রাইভেসি নস্ট করতে পারিনা। আমি আমার রুমে এলাম। পরিপাটি করে সাজান রুমটি দেখে মন ভাল হয়ে গেল। কাল সকালে ওয়াশিংটনের বিখ্যাত লাইব্রেরি দেখতে যাব। সারাদিনের ক্লান্তি ঘুচিয়ে ব্যাক্তিগত কাজকর্ম সেরে ঘুমাতে গেলাম। রাতে ঘুম ছুটে গেল। নতুন জায়গায় রাত কাটাচ্ছি তাই ভয় করল। খচর মচর শব্দে মাথার উপর জানালার কার্নিসে দেখি রাত জাগা চড়ুই পাখি পাখা ঝাপটাচ্ছে। প্রচন্ড তুষারঝড় হচ্ছে। আর ঘুম এলনা। জামা, কাপড় সুটকেস থেকে বার করতে আবার আলোটা চোখে পড়লো। তবে এবার আলোটা খানিকটা কম। সুটকেসের উপর কেন জানি একটু বিরক্ত হলাম। বাঁটুয়ার সবুজ রঙা সুগন্ধিটা ভালোভাবে ঝাকাতে লাগলাম। সুগন্ধিটা কয়েকে ফোটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরলাম, এমন মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে ব্রিজ ফুল থেকেও তীব্র ও মাতাল করা এর ঘ্রান। ক’এক ফোঁটা সকালে যে ড্রেস পরব তার উপর বুলিয়ে দিলাম। আর কয়েকফোঁটা ঠোঁট ফাঁক করে মুখের মধ্যে চালান করলাম। ভাবলাম ঘ্রান যেই সুগন্ধির এতো সুন্দর, খেতেও নিশ্চয় মন্দ হবেনা। টেস্ট করেই দেখিনা স্বাদ কি রকম, স্বাদ খারাপ না। অন্তত এটা বিষ না। খেতে অনেকটা গোলাপজলের মত। আমি একটা আস্ত বেকুবের বেকুব। কেউ জানতে পারলে হয়তো মুখ টিপে হাসবে। তাড়াতাড়ি সুটকেস বন্ধ করলাম। 

ভোরের আলো ফুটতেই জামা কাপর পড়ে তৈরি হয়ে হোটেলের লবিতে দাড়ালাম। হোটেলের নাম ওয়েসটিন। ছিম ছাম, নীরব কিছু ফ্যামিলিও এই হোটেলে ছুটি কাঁটাতে উঠেছে। লি, হোশে কে সাথে করে আমার দিকে এগিয়ে এলো। হোশের কাছ খেকে চমৎকার একটা প্রশংসা শুনলাম, সিন্থিয়া তোর গল্পটা কাল রাতে পড়েছি অসাম হয়েছে। প্রশংসা শুনতে কার না ভাল লাগে। লি বলল পারপল ড্রেসে তোকে খুব মানিয়েছে। যাই বল সকালটা শুরু হয়েছে চমৎকার ভাবে। ব্রেকফাস্ট সেরেই আমরা রওনা হলাম। ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি দেখতে। এই লাইব্রেরি পৃথিবী বিখ্যাত। আমি লি কে বললাম, তোরা তো আসতে চাইছিলি না। আমি তাদের নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। হাজার, হাজার বই। যারা বই পছন্দ করেনা, তারাও মুগ্ধ হয়ে যাবে। এই লাইব্রেরির প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট শ’য়ের উপর স্টাফ আছে। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট একজন করে লাইব্রেরিয়ান এরা স্টাফদের নির্দেশ দেয়, আমি একটা বই নেড়েচেড়ে দেখছিলাম, একজন স্টাফ ছুটে এলো ভয় পাচ্ছিলাম, আমি জানি বহিরাগত দর্শনার্থীরা এভাবে বই দেখতে পারেনা। স্টাফ ছুটে আসতে দেখে বই খানা হাত থেকে পড়ে গেল। বইটি ছিল অনেক পুরনো তাই মেঝের কার্পেটে পড়লেও তা অনেক খানি ছিড়ে গেল। অবাক ব্যাপার আমি ভেবেছিলাম এর জন্য আমাকে শ’খানেক ডলার গচ্চা দিতে হবে। স্টাফ আমাকে কিছু বললোনা, উল্টো মুখ কাচুমাচু করে বইখানি দ্রুত সরিয়ে নিল, যেন সেই মস্ত বড় অন্যায় করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমি দুঃখিত ম্যাম আপনার লাগেনিতো। এমন সময় একজন লাইব্রেরিয়ান এলো। আমার দিকে চেয়ে অমায়িক হাসি হাসল। লি আর হোশে পুরো বিষয়টাই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিল। লাইব্রেরিয়ান নীল চোখ পিটপিট করে বলল আপনি কোন বইটি খুজছেন আমাকে বলুন, আমি দেখছি। যতো খুশি দেখুন, পড়ুন, দরকার পরলে সাথে নিয়ে যান কেউ কিছু বলবেনা। আমরা জানি আপনার কি পছন্দ। আমি হকচকিয়ে রইলাম। বিষয়টা বুঝতে পারছিলাম না। কি করব, একজন সুন্দরী মার্কিন মহিলা লাইব্রেরিয়ানকে বলল তোমার কি কোন ভদ্রতা নাই, মেয়েটাকে জেরা করছ।আমি হতভম্ব, বিব্রত ভাবে হাসলাম। লাইব্রেরিয়ান আমাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত কচলাতে লাগলো। লি আর হোশে এমন ভাব দেখাতে লাগলো যেন পুরো বিষয়টি খুব স্বাভাবিক। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বললাম, যথেষ্ট হয়েছে। আমি জানিনা তোমরা আমাকে কি ভাবছ? মনে হয় অন্য কিছু ভেবে ভুল করছ। লাইব্রেরিয়ান বললো আমরা আপনাকে ঠিক চিনেছি।আর একটু বসুন।আমি তাড়াতাড়ি পা বাড়ালাম, বললাম দেখ তোমরা মস্ত ভুল করছ। কোন ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। আজ হচ্ছেটা কি অদ্ভুত ভাল সময় যাচ্ছে, মনে হল। অনেক জায়গায় ঘুরলাম সবাই আমাকে মাথায় করে রাখে, এত চমৎকার দিন আমার জীবনে আর আসেনি। ঘুরে বেরিয়ে হোটেলে ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 

পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বেশ বেলা হয়ে গেছে। এর মধ্যে তৈরি হয়ে নিলাম। লির রুমে নক করলাম, বাইরে থেকে স্তিকার দেখে বুঝলাম তারা বাইরে চলে গেছে। নিজের উপর রাগ লাগলো। বেরিয়ে পরলাম, গতকালের কথা মনে পরতেই মনটা খুশি হয়ে উঠল। সামনে জটলামত মনে হছে তুষারপাত হচ্ছে মানুষ যার, যার মত এনজয় করছে। কেছুদিন পরে তো আবার ক্রিসমাস। আমেরিকায় ক্রিসমাস মওসুমে বিজনেস চলে জাঁকিয়ে। জটলার মধ্যে ঢুকে পড়লাম, একজন এর সাথে ধাক্কা খেলাম, আর একজন কুত্তি বলে গালি দিল। আমি কিছু মনে করলাম না, কারন এর থেকে জঘন্য গালি বাংলাদেশিরা জানে, এটা আমি ছোটবেলায় বাংলাদেশ ছেড়ে যখন আসি তখন দেখেছি। কিন্ত আমেরিকায় আসলে আমাদের আত্মসম্মানতো আবার বেড়ে যায়, যারা নিজেরা সম্মান করতে তারা অন্যদের থেকে কিভাবে আশা করে। জটলা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। এক বাংলাদেশি বান্ধবির সাথে দেখা হয়ে গেল। সে মনে হয়, শপিংএ যাচ্ছিল। আমার দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে বলল, তুমি সিন্থিয়া না, এখানে কি করছ? আমি হাসি মুখে বললাম তেমন কিছুনা ঘুরাফিরা করছি। বান্ধবি মুচকি হেসে বলল তোমার অদ্ভুত স্বভাব এখনও গেলনা। তারপর সবজান্তার ভাব করে একটা বাচ্চার হাত ধরে, আরও ক’একজনকে সাথে করে চলে গেল। খিদে লাগছিল এক রেস্তোরায় ঢুকলাম। হোটেলে ফিরলাম, হট শাওয়ার নিলাম, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন হলাম।মনটা হাল্কা হল। রেস্ট নেবার জন্য বেডে গা এলিয়ে দিলাম। ভাবতে লাগলাম, এই ক’একদিনের অদ্ভুত সব ঘটনা, সুটকেসটা খুলে বাঁটুয়া থেকে সুগন্ধিটা বের করলাম, ছোট শিশিটায় আর কয়েক ফোঁটা তরল আছে। আজ আমি এটা মাখিনি তাই কাল এই পারফিউমে দিন চলে যাবে। আকাশ, পাতাল চিন্তা আসতে লাগলো। নানা এই অদ্ভুত জিনিসটা কোথায় পেল। তবে কি তিনি দ্বৈত জীবনযাপন করতেন। আর এই অদ্ভুত সুগন্ধি তিনি গোপনে আমাকেই বা দিয়ে গেল কেন? তিনি কি আমাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে চান। অর্থাৎ সারা জীবন যখন তার প্রয়োজন হয়েছে তখন এই দ্রব্য তিনি ব্যবহার করেছেন আর আমার ক্ষেত্রেও তিনি এই অদ্ভুত জিনিস দান করে গেছেন। যেন আমিও তার মত এটা ব্যবহার করে জীবনে সাফল্য পাই। কিন্ত এটাতো প্রতারণা ছাড়া আর কিছু না। না হয় বুঝলাম আমার ভালোর জন্য এটা আমাকে দিয়েছেন কিন্তু এই সুগন্ধি তিনি কার থেকে পেল।তাহলে কি অন্য জগতের কেউ তাকে এটা দিয়েছে। না আমি এই মিথ্যা সাফল্য চাইনা। আমি প্রকৃত সৎ থাকতে চাই। আর কিছুনা ভেবে চোখ বন্ধ করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে মানিকজোড় লি আর হোশে আমার রুমে ব্রেকফাস্ট নিয়ে হাজির। লি আন্তরিক ভাবে হাতে স্যানডুইচ তুলে দিল। সারাদিন অনেক হৈ-হল্লর, হাসি তামাসা হল। কাল শিকাগো ফিরবো। কিন্ত আমার মন বলছে কিছু একটা ঘটবে। আর কখনও নানির সাথে ঝগড়া করতে পারব না। ওয়াশিংটন থেকে শিকাগো যাবার পথে প্লেনের চাকাতে গণ্ডগোল দেখা দেওয়ায়, প্লেনটি সামান্য দুর্ঘটনার মুখোমুখি হল, সব যাত্রী বেঁচে গেলো একজন ছাড়া, অভাগী সিন্থিয়া হোসেন সেই একজন।


লেখিকা: মাহাবুবা ইসলাম আজমি(মুক্তি)       

No comments:

Powered by Blogger.