Header Ads

দেখ কেমন লাগে - দীপারুণ ভট্টাচার্য্য

ডাক্তার তুষার সিংহ, আমার বিশেষ বন্ধু। বন্ধুদের জন্য তাঁর অবারিত দার। পাখি শিকার তুষারের এক নেশা। সেদিন সন্ধ্যেবেলা ফোন, কে.সি. এসেছিলো চারটে ব্লু-লেভেল রেখে গেছে। কবে বসবে?
আমি প্রশ্ন করলাম, বৌদি কোথায়?
- মালতী ছেলেকে নিয়ে কোলকাতা গেছে। 
- তাই বলো।
-কাল সন্ধ্যেতে তোমার সময় হবে? শুভস্য শীঘ্রম। কাল ভোরে চলো জেনাপুর, শুনলাম বালিহাঁস এসেছে। দু-চারটে পেলে জমে যাবে।
জেনাপুর এক বিরাট অগভীর বিল। বর্ষায় নদীর জল এই বিল ভর্তি করে। সারা বছর জেলেরা মাছ ধরে আর তুষারের মতো কয়েকজন পাখি মারতে আসে। সেদিন পাওয়া গেলো তিনটে বালিহাঁস। তুষার বলল, ফটিক কেটেকুটে দেবে, রান্না কিন্তু তুমি আর আমি, ছটা নাগাদ চলে এসো। ফটিক, তুষারের সর্বক্ষণের লোক।
হঠাৎ সাড়ে পাঁচটায় ফোন, সর্বনাশ হয়েছে, সবাইকে আসতে বললাম, এখন আমি কি করি?
- কি হয়েছে?
- মুক্তিনাথ এসেছিলো, আমি তখন ক্লিনিকে। বালিহাঁসের মাংসটা ফ্রিজ থেকে নিয়ে পালিয়েছে।
- ফটিক কোথায় ছিলো, মানা করেনি?
- মানা করেছিলো কিন্তু মুক্তি কি ফটিকের নিষেধ শোনার মত ভদ্র! তুমিতো তাকে চেনো।
বাজার থেকে মুরগী এনে সে যাত্রায় তুষারের মুখ বাঁচলো।
পরের দিন সকালে মুক্তির আগমন। মুক্তিনাথ দে, লোকের মেরে খাওয়াই তার জীবনের একমাত্র মোক্ষ। সবাই তার থেকে মুক্তি চায়। এসেই বলল, ওঃ দাদা, কাল যা খেলাম না, কি বলবো। শশুর, শাশুড়ি, শালী সব হুট করে এসে পড়লো। ভাবলাম বৌদি নেই, তুষারদার ফ্রিজে কিছু নিশ্চই পচছে। কি ছিলো দাদা, অসাধারণ!
জানিনা তুষার কিভাবে নিজেকে সামলালো, আমি হলে ওকে আজই চিরমুক্তি দিতাম।
- ওটা বালিহাঁস ছিলো। শান্ত ভাবে তুষার বললো।
- মুখে লেগে আছে দাদা, আর একদিন কি হতে পারে?
- নিশ্চই, কবে চাই বলো?
- পরশু ওরা চলে যাবে, তাই কাল যদি হতো, দুপুরে ভাত দিয়ে খেলে বেশি ভালো লাগবে, গতকালতো রুটি দিয়ে খেয়েছি!
- কাল রবিবার, তুমি বরং দশটা নাগাদ এসে ফটিকের থেকে নিয়ে যেও। আর বিকেলে ক্লিনিকে এসে জানিও ভাত দিয়ে কেমন লাগলো। এখন ওঠো। মুক্তিনাথ চলে গেলো। আমি হতবাক, এটা কি হলো?
-কি আবার হবে, কাল সকালে আবার জেনাপুর।
-আমি যেতে পারবোনা, মুক্তিনাথের মতো একটা অপদার্থের রসনা মেটাতে আমি রাজি নই।
তুষার তখনও ভাবলেশ হীন। বললো, ঠিক আছে, তোমাকে যেতে হবেনা। তবে কাল বিকালে ক্লিনিকে একবার এসো, আমার অনুরোধ।
বন্ধুর অনুরোধ ফেলা মুশকিল। সন্ধেবেলা ক্লিনিকে গিয়ে দেখি, বেশী রুগী নেই। বললাম, কি সংবাদ?
- মুক্তি সংবাদ এখনো আসেনি, তুমি চা খাবে?
এমন সময় মুক্তির প্রবেশ। খানিকটা উদভ্রান্ত লাগছে তাকে।
- দাদা, ওটা কিসের মাংস ছিলো বলুনতো?
- কেন কি হয়েছে? তুষার আবারও ভাবলেশ হীন।
- বউ সিটির পর সিটি দিয়ে যাচ্ছে, সিদ্ধ আর হচ্ছেই না। এদিকে সাড়ে তিনটে বাজে, পেট আকুপাকু করছে। সকাল থেকে কিছু খায়নি তো!
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। মনে হলো কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তুষারের চোখে মুখে, আনন্দের ছটা, তারপর তারপর?
- তারপর আর কি, বউকে বললাম, যা হয়েছে তাই দাও। কি বলবো দাদা, রাবারের মতো। প্রচুর কামড়েও কব্জা করতে পারলাম না। শেষে শুধু ঝোল দিয়ে ভাত খেলাম! কিন্তু দাদা সবচেয়ে অবাক হলাম, যখন মাংস গুলো ফেলে দেয়া হলো, কুকুর গুলোও খেলনা, শুঁখে চলে গেলো, কেনো বলুনতো?
- তুমিতো বললে সেদ্ধ নাকি হয়নি। কতো গুলো সিটি দিয়েছিলে?
- গুনেতো আর দেখিনি দাদা, তবে পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবে।
- ওখানেই ভুল হয়েছে মুক্তি, আমাকে যদি টেলিফোন করতে আমি বৌদিকে বলে দিতাম। আড়াইশো তিনশো সিটি দিলে, মনে হয় সিদ্ধ হয়ে যেতো!
- কি বলছেন দাদা, তিনশো সিটি?
- শ-তিনেক সিটি না দিলে কি আর শকুনের মাংস সিদ্ধ হবে?
আমি আর তুষার এবার প্রানখুলে হাসতে লাগলাম। মুক্তিনাথ বমি করতে করতে পালালো।

লেখক পরিচিতি: 
দীপারুণ ভট্টাচার্য্য, শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জী ইনস্টিটিউট এবং উৎকল উনিভার্সিটির প্রাক্তনী বর্তমানে ফরিদাবাদ নিবাসী। লেখার শুরু ১৪-১৫ বছর বয়সে, কবিতা দিয়ে। তার পর গল্প আর নাটক। আরেক বেদুইন, সংকল্প, জোয়ার ইত্যাদি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এনার লেখা বেরিয়েছে।

লেখকের নতুন প্রয়াস এই অনুগল্প। এনার ফেসবুক পেজ দেয়া রইলো নিচে।
https://www.facebook.com/Diparun.Bhattacharyya/



অঙ্কন - সোময়েত্রী ভট্টাচার্য্য

No comments:

Powered by Blogger.